পাশাপাশি, কাছাকাছি সাকিব-তামিম
একটা সময় একনিঃশ্বাসেই উচ্চারিত হতো দুজনের নাম। দলের অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ক ছিলেন। আরও আগে থেকে দলের সবচেয়ে নিয়মিত দুই পারফরমার। মাঠে অনেকটা দলের ভাগ্যনিয়ন্তাও। দলের জয়-হার, ভালো করা-খারাপ করা নির্ভর করত তাঁদের দুজনের ওপর।
সেই দিনগুলো পেছনে ফেলে এসেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। দলে এখন অনেক পারফরমার। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের জীবনের বাঁক আর দলে ভূমিকাও গেছে বদলে। সাকিব ক্রমেই ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে। অলরাউন্ডারদের বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে চূড়ায় উঠেছেন। ক্রিকেট-বিশ্ব দাপিয়ে হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের মুখ। সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনও। তামিম এখনো দলে অপরিহার্য এক নাম, দেশের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। কিন্তু প্রতিভা-সামর্থ্য অনুযায়ী আজ তাঁর পরিচয় হয়ে ওঠার কথা ছিল দেশের অবিসংবাদিত সেরা ব্যাটসম্যান, বিশ্বসেরাদের একজন। সাকিবের মতো চূড়ায় না হোক, অন্তত থাকার কথা ছিল চূড়ার কাছাকাছি।
সেটা কেন পারেননি, কিংবা সম্ভাবনা ফুরিয়ে যায়নি, এসব আরেকটি আলোচনার বিষয়। তবে একটা জায়গায় আজ, কিংবা শিগগিরই আবার পাশাপাশি বসতে যাচ্ছে সাকিব ও তামিমের নাম। সেটির জন্য সাকিবের চাই ৬৪ রান আর তামিমের ৯৫। তাহলেই ওয়ানডেতে দুজনের রান হয়ে যাবে ৪ হাজার। বলার অপেক্ষা রাখছে না, বাংলাদেশের আর কেউ ৪ হাজারের খুব কাছে আসতে পারেননি। ৩৪৬৮ রান ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত মোহাম্মদ আশরাফুলের। এই তো সেদিন, এই সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৩ হাজার ছুঁলেন মুশফিক (৩০৩২)। আরও অনেকটা পেছনে থেকে পাঁচে শাহরিয়ার নাফীস (২২০১)। সাকিব-তামিমের একজন তাই নিশ্চিতভাবেই হচ্ছেন প্রথম ৪ হাজারি, আরেকজন দ্বিতীয়।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে দুজনের আগমন, এগিয়ে চলা প্রায় হাত-ধরাধরি করেই। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায় মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন দুজন। ওই বছরই আগস্টে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে সাকিবের অভিষেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ৫ মাস পর, একই দেশে একই ভেন্যুতে ওয়ানডে দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা তামিমের। অভিষেকে ১ উইকেট নেওয়ার পর অপরাজিত ৩০ করে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফিরেছিলেন সাকিব। তামিমের অভিষেকেও জিতেছিল দল, তবে তিনি ফিরেছিলেন মাত্র ৫ রানে।
তামিমের অভিষেকের সময় দলে মোটামুটি থিতু হয়ে গেছেন সাকিব, তত দিনে খেলেছেন ১৬ ম্যাচ। তামিম অভিষেকে ভালো না করলেও প্রতিভায় আস্থা রেখে পাঠানো হয়েছিল ২০০৭ বিশ্বকাপে। ওই বিশ্বকাপেই তামিম বিশ্বকে জানিয়েছিলেন নিজের আগমনী বার্তা। ভারতের বিপক্ষে সেই খুনে ফিফটি ছিল তাঁর পঞ্চম ওয়ানডে। মজার ব্যাপার, সাকিবও প্রথম ওয়ানডে ফিফটি পেয়েছিলেন পঞ্চম ম্যাচে!
এরপর দুজন এগিয়েছেন পাশাপাশি। ১৯তম ইনিংসে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পান সাকিব, তামিম ২৭তম ইনিংসে। ৩৭ ইনিংসে হাজার রান হয়েছিল তামিমের, সাকিবের লেগেছিল ১ ইনিংস বেশি। দুই হাজার ছোঁয়ার সময় তামিমের (৭০) চেয়ে এক ইনিংস কম লেগেছিল সাকিবের (৬৯)। আড়াই হাজার যেতে যেতে আবার খানিকটা এগিয়ে যান তামিম। ৮৬ ইনিংস লেগেছিল তাঁর, সাকিবের ৯১। তিন হাজার ছুঁতেও তামিমের (১০২) লেগেছিল সাকিবের (১০৫) চেয়ে কম ইনিংস।
সাড়ে তিন হাজারে গিয়ে দেখা হয়ে যায় দুজনের, দুজনই ১১৯ ইনিংসে! এরপর তামিমের বেশ কবার চোট, সাকিবের চোট, বিতর্কিত নিষেধাজ্ঞা—সব মিলিয়ে দুজনই নানা সময় ছিলেন মাঠের বাইরে। এই সিরিজের শুরুতে দুজনের সামনেই ৪ হাজার ছোঁয়ার হাতছানি। প্রথম ম্যাচে ১০১ রানের পর দ্বিতীয় ম্যাচে সাকিব ফিরেছেন প্রথম বলে। প্রথম ম্যাচে ৫ রানে ফিরে যাওয়া তামিম পরের ম্যাচে করেছেন ৭৬। তামিম আজ খেলবেন ১৩২ নম্বর ইনিংস, ব্যাটিং পেলে সাকিব ১৩৩ নম্বর। আজ হোক বা পরশু কিংবা সিরিজের শেষ ম্যাচে...অথবা পরে, ৪ হাজার হবেই দুজনের। আবার একনিঃশ্বাসে উচ্চারিত হবে দুজনের নাম। অন্তত একটি জায়গায়।
হবেই যখন, আজই হোক না!
No comments:
Post a Comment