Wednesday, November 26, 2014

সিরিজ জয়ের ম্যাচ?

সিরিজ জয়ের ম্যাচ?

চট্টগ্রামবাসী নিশ্চয়ই আফসোস করছে। টেস্ট, ওয়ানডে মিলিয়ে বাংলাদেশ দলের তিনটি জয়ের সাক্ষী তারা, অথচ সিরিজ জয়ের ম্যাচটাই কিনা দেখতে পারছে না!
জিম্বাবুয়ের সঙ্গে পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ আজ। ২-০ তে এগিয়ে থাকায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের এ ম্যাচটি জিতলেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের। তাই আগেভাগে বলে দেওয়া কি ঠিক হচ্ছে যে, এটিই সিরিজ জয়ের ম্যাচ? ঢাকায় এসে তো আজ ঘুরেও দাঁড়াতে পারে এল্টন চিগুম্বুরার জিম্বাবুয়ে!
খুবই পারে। কিন্তু দলটির শরীরী ভাষা দেখে কে বলবে, তারা বাংলাদেশে জিততেও এসেছে! তিন টেস্টের সিরিজে ধবলধোলাইয়ের পর এক দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ ও ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেও হার আত্মবিশ্বাসের শিরদাঁড়াটাই যেন ভেঙে দিয়েছে জিম্বাবুয়ের। ও হ্যাঁ, তৃতীয় ওয়ানডের আগের সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা ভুসিমুজি সিবান্দা অবশ্য শুনিয়ে গেলেন জয়ের আশাই। ম্যাচটাকে জীবন-মরণ লড়াই ধরে নিয়ে তাঁর কথা, ‘আমরা যে করেই হোক, ম্যাচটা জিততে চাই। আমাদের জন্য এখন সিরিজটা এই এক ম্যাচেরই, যেখানে আমাদের সবটুকু ঢেলে দিতে হবে। দলের সবাই জয়ের জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে আছে।’
এই ক্ষুধা মিরপুরে আজ বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের সম্ভাবনাকে গিলে খেতে পারে কি না, সেটাই দেখার। তবে সিবান্দাও নিশ্চয়ই জানেন, টেস্ট সিরিজের পর জিম্বাবুয়েকে ওয়ানডেতেও ধবলধোলাই করতে চায় বাংলাদেশ। সে লক্ষ্যপূরণে শুধু আজকের ম্যাচ কেন, বাংলাদেশ জেতার আশা করছে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচও।
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা অবশ্য শুরু থেকেই বলে আসছেন, ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চান। প্রথম দুই ম্যাচে সেভাবেই এগিয়ে দলটা এখন সিরিজ জয়ের দ্বারপ্রান্তে। তৃতীয় ওয়ানডের আগে তাই ৫-০-এর কথা বললেন না মাশরাফি, ‘আমরা প্রত্যেকটা ম্যাচই জিততে চাই। তবে আপাতত কালকের (আজ) ম্যাচ জিততে হবে। বাকি কাজটা তাহলে খুব সহজ হয়ে যাবে।’
জয়ের ধারার মধ্যে থাকা মাশরাফি-সাকিবদের জন্য কাজটা এমনিতেও খুব কঠিন হওয়ার কথা নয়। তবে তৃতীয় ওয়ানডে হচ্ছে ভিন্ন ভেন্যুতে। মাঝে গেল দুই দিনের বিরতি। আগের দুই ম্যাচের কথা ভুলে তাই মাশরাফি চাইছেন নতুন শুরু, ‘প্রত্যেকটা ম্যাচই নতুন। সবকিছুই তাই নতুন করে শুরু করতে হবে। দুই দিনের একটা বিরতির পর আবার নতুন একটা ম্যাচ এসেছে। এটিকে সিরিয়াসলি নিয়ে সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে।’
‘নতুন’ ম্যাচে বাংলাদেশ দলও আজ নেবে নতুন চেহারা। আগের দুই ম্যাচে খেলা পেসার আল আমিন নেই তৃতীয় ওয়ানডের ১৪ জনের দলে। তাঁর জায়গায় নিশ্চিতভাবেই একাদশে ঢুকবেন আরেক পেসার শফিউল ইসলাম। তবে আজ ম্যাচের আগে উইকেটের চেহারা কেমন দেখায়, সেটির ওপরই নির্ভর করছে আরও একটি পরিবর্তন। তিন পেসারের জায়গায় দুই পেসার খেলানো হলে রুবেল হোসেনের পরিবর্তে ওয়ানডে অভিষেক হয়ে যেতে পারে লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেনেরও।
চট্টগ্রামে শিশির শেষ পর্যন্ত বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি বাংলাদেশ দলের সামনে। দুটি ম্যাচেই পরে বোলিং করেও জিতেছে বাংলাদেশ। তবে আবহাওয়ার ওপর যেহেতু কারও হাত নেই, ঢাকার ম্যাচে শিশির কোনো সমস্যা হবে কি না, তা ম্যাচের আগে বলা কঠিনই। মিরপুরে আগে ব্যাট করলে ঠিক কত রান নিরাপদ, মাশরাফিও তা ছেড়ে দিয়েছেন কন্ডিশনের হাতে, ‘শিশির কী পরিমাণ পড়ে, সেটা আগে দেখতে হবে। চট্টগ্রামের আর এখানকার ঘাস এক নয়। চট্টগ্রামের শেষ ম্যাচে যেমন প্রথম ম্যাচের তুলনায় একটু বেশি শিশির ছিল। কন্ডিশন বুঝেই তাই বলতে হবে কী হতে পারে।’
জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগ পর্যন্ত বছরটা বেশ খারাপই যাচ্ছিল বাংলাদেশ দলের। তবে এই খারাপের মধ্যেই বছরের সেরা দুটি আবিষ্কার বলতে পারেন তাইজুল ইসলাম আর জুবায়ের হোসেনকে। টেস্টের পরীক্ষায় দুজনই উত্তীর্ণ। এ ছাড়া ওয়ানডে অভিষেকে সাব্বির রহমানও অনেকটা প্রমাণ করেছেন নিজেকে। তাইজুল টেস্ট দলে নেই। তবে আজ দলে থাকলে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাবেন জুবায়েরও। 
মাশরাফি অবশ্য জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রাপ্তির খাতায় আরও কিছু দেখতে চান। তার মধ্যে অন্যতম, আজই ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা। এই জয় বাংলাদেশ দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, ব্যাখ্যা করেছেন সেটিও, ‘সিরিজ জয় আমাদের জন্য খুবই দরকার। বিশেষ করে এই বছরের প্রেক্ষাপটে সিরিজটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এখনো আছে। বিশ্বকাপের আগে আমরা ভালোভাবে জিততে চাই সিরিজটা। বিশ্বকাপে তাহলে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে যেতে পারব।’
সন্দেহ নেই ৫-০ তে সিরিজ জিততে পারাই সর্বোচ্চ সঞ্জীবনী সুধা ঢালবে বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসে। তার আগে আজই নিশ্চিত করে ফেলা চাই সিরিজ জয়ের আনুষ্ঠানিকতা।

No comments: