চা নিয়ে দুই লাইনের একটা কৌতুক আছে—
: টি-পট সব সময় ঝামেলায় পড়ে কেন?
: কারণ সে NaughTEA (নটি)।
চা নিয়ে মৌসুমী-ফেরদৌসের কাছে একটা প্রশ্ন ছিল—
: এক কাপ চা বানাতে কত দিন লাগে?
উত্তর যে এক লাইনের সীমানায় বাঁধা যাবে না, সেটা এই অভিনয়শিল্পী জুটি জানতেন। তাই দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। মৌসুমী বললেন, ‘ফেরদৌস, ব্যাখাটা তুমি-ই দাও!’
তরুণ কলেজশিক্ষকের মতো গলা খাঁকারি দিয়ে ব্যাখা দিতে শুরু করলেন ফেরদৌস, ‘এক কাপ চা ছবির শুটিং শুরু হয়েছিল অনেক আগে। শেষ হতে এত সময় নেওয়ার পেছনে বড় কারণ শুটিং-জটিলতা। মাঝে এই ছবির আরেক অভিনয়শিল্পী ঋতুপর্ণা মা হলেন। ফলে তাঁর জন্য বেশ খানিকটা সময় বিরতিতে যেতে হয়েছিল। তবে সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছে পোস্ট প্রোডাকশনের জন্য। ছবিটিতে আমি কেবল অভিনয়ই করছি না, প্রযোজনাও করেছি। তা-ও আবার প্রথমবারের মতো, ফলে সবকিছু নিয়েই খুব পরিশ্রম করেছি, সময় দিয়েছি।’
ফেরদৌসের ব্যাখ্যায় যোগ করলেন মৌসুমী, ‘নবীন পরিচালক নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল পরিচালিত এই ছবিটি নিয়ে আমরা এখন বেশ রোমাঞ্চিত। শেষ পর্যন্ত ভালোয় ভালোয় “শেষ” হলো।’ কথাটিতে পুরোপুরি একমত ফেরদৌসও, ‘সেটাই, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। শুক্রবার দেশের প্রায় অর্ধশত প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে এক কাপ চা। আশা করি, দর্শক এতে মৌসুমী-ফেরদৌস জুটিকে নতুন চেহারায় দেখবেন।’
অথচ ১৪ বছর আগের কোনো এক শীতের বিকেলে এফডিসির শুটিং স্পটে বসে ফেরদৌস কি এমনটা ভাবতে পেরেছিলেন? কিংবা মৌসুমী নিজে? ফেরদৌসের ভাষায়, ‘চলচ্চিত্রে মৌসুমী তখন মধ্যগগনে নয়, পুরোপুরি ঊর্ধ্বগগনে অবস্থান করছেন। অভিনয় করছে বড় বড় তারকা অভিনেতাদের সঙ্গে জুটি বেঁধে। ঠিক সে সময় পরিচালক বাদল খন্দকার একদিন বললেন, “মৌসুমীর সঙ্গে অভিনয় করবে?” মনে আছে, মিস ডায়না ছবিতে একটি অতিথি চরিত্রে মৌসুমীর সঙ্গে অভিনয় করলাম। নৃত্যপরিচালক মাসুম বাবুল শুটিং শেষে বললেন, “মনে রেখো, বাংলা চলচ্চিত্রে আরেকটা জুটি দাঁড়িয়ে গেল।”’
১৪ বছর পর মাসুম বাবুলের কথাটা সত্যি করেছে এই জুটি। বিশেষ করে ‘জুটি’ হিসেবে মৌসুমী-ফেরদৌস নজর কেড়েছেন খায়রুন সুন্দরী ছবিটির পর। দুজনে মিলে ‘এক কাপ চা’ হয়ে ওঠার রেসিপি কী? দুজনের একই উত্তর, ‘বন্ধুতা!’
আড্ডায় ছিলেন না দুজনের আরেক কাছের বন্ধু ঋতুপর্ণা। তাঁর প্রসঙ্গও উঠে এল কথায় কথায়। বাসু চ্যাটার্জির এক কাপ চায়ের চিত্রনাট্যে ঋতুপর্ণা যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন, সেটাতে নাকি কেবল তাঁকেই মানাত। আর প্রযোজক হিসেবে নিজেকে কীভাবে মানিয়ে নিলেন ফেরদৌস? মৌসুমীর চোখে, ‘খুবই ধৈর্যশীল, বিনয়ী, রুচিশীল ও পরিশ্রমী প্রযোজক সে। ও আমার কাজের বেলায় নিজেকে উজাড় করে দেয়। আমিও চেষ্টা করেছি আমার সর্বোচ্চটুকু দিতে।’
নতুন এই অভিজ্ঞতা নাকি বেশ উপভোগ করেছেন ফেরদৌস, ‘প্রযোজনা শুরু করেছিলাম নানা আশঙ্কা নিয়ে। কিন্তু চলচ্চিত্র অঙ্গনের, বিশেষ করে চলচ্চিত্র পরিবেশক থেকে শুরু করে প্রচারণার কাজে যাঁরা যুক্ত, তাঁরাও দারুণ সহযোগিতা করেছেন। ফলে নতুন ছবি প্রযোজনার সাহস ও উৎসাহ পাচ্ছি। আর মৌসুমীর মতো বন্ধু পেলে তো কথাই নেই। ও যে সহযোগিতা আমাকে করেছে, সেটা অনেক পুরস্কারের চেয়েও দামি!’
চায়ে চুমুক দিচ্ছিলেন মৌসুমী, ফেরদৌসের প্রশংসায় পুরো চুমুক দিতে পারলেন না, চোখ বড় বড় করে বললেন, ‘আমার জীবনের অন্যতম কমপ্লিমেন্ট এটা! নাও, এক কাপ চা খাও!