সেই পাকিস্তানই মাটিতে
জীবন ২২ গজি পিচের চিত্রনাট্য নয়। কিন্তু কখনো কখনো সেই পিচেই লেখা হয়ে যায় মৃত্যুর এপিটাফ। এই কদিন শারজায় এই কথাগুলোই হয়তো ঘুরে ঘুরে আসছিল ম্যাককালাম-মিসবাহদের মনে। ফিলিপ হিউজের অকালমৃত্যু পুরো ক্রিকেটকে ঢেকে দিয়েছে শোকের চাদরে। সেই ছায়া পড়েছে শারজাতেও, দুদলের ক্রিকেটাররা পরিমিত উদ্যাপনে, আনন্দ সংবরণে সেটাই মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন। ম্যাককালাম-মিসবাহ পরে বলেছেন, খেলায় মনোযোগ দেওয়া তাঁদের জন্য কতটা কঠিন ছিল। সেই কাজটা পাকিস্তানের চেয়ে নিউজিল্যান্ডই ভালোভাবে করতে পেরেছে, ইনিংস ও ৮০ রানের দুর্দান্ত এক জয়ে সিরিজে এনেছে সমতা।
ঠিক যেন রোলার কোস্টারের চিত্রনাট্য অনুসরণ করল সিরিজটা। আবুধাবিতে দুর্দান্ত পাকিস্তানের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি যে নিউজিল্যান্ড, তারাই দুবাই টেস্ট ড্র করে ফিরে পেল আত্মবিশ্বাস। এতটাই যে, শারজায় তারা সম্পূর্ণ নতুন এক নিউজিল্যান্ড। ম্যাচের দ্বিতীয় দিন থেকেই নিয়ন্ত্রণ থাকল কিউইদের হাতে, তার পরও চতুর্থ দিনেই জয় পেয়ে যাবেন সেটি বোধ হয় ম্যাককালামও ভাবেননি!
কাল চতুর্থ দিনে পাকিস্তান ট্রেন্ট বোল্টের তোপই সামলাতে পারেনি। দুর্দান্ত এক ওপেনিং স্পেলে পাকিস্তান টপ অর্ডারকে শেষ করে দিয়েছেন বাঁহাতি পেসার। শান মাসুদকে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে শুরু, নিজের চতুর্থ ওভারে দুর্দান্ত সুইংয়ে বোল্ড করেছেন আজহারকে। এক ওভার পরই আরেকটি দারুণ ইনসুইঙ্গার, এবার এলবিডব্লু ইউনিস খান। ক্যারিয়ারে ১৬তম বারের মতো শূন্যতে আউট ফর্মে থাকা পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান কদিনের ব্যবধানে দেখে ফেললেন মুদ্রার উল্টো পিঠটাও!
বোল্টের শুরু করা কাজটা দারুণভাবে সেরেছেন মার্ক ক্রেগ। হাফিজকে নিজের বলেই ক্যাচ নেওয়ার পর উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন মিসবাহকে। প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের এই স্পিনার, কাল ৩ উইকেট নিয়ে দারুণ একটা কীর্তিও গড়ে ফেললেন—মাত্র তৃতীয় কিউই স্পিনার হিসেবে এক ম্যাচে ১০ উইকেট নিলেন ক্রেগ। ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে তাঁর হাতেই, মোহাম্মদ হাফিজ হয়েছেন সিরিজ-সেরা।
মিসবাহর বিদায়ের পর ৬৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো কাঁপছিল পাকিস্তান। এরপর পাল্টা-আক্রমণ হানেন আসাদ শফিক। সরফরাজকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৭৩ রানের জুটি গড়েন মাত্র ১৩ ওভারে। সরফরাজকে ফিরিয়ে জুটিটা ভাঙেন ইশ সোধি, ইয়াসির শাহও তাঁর শিকার। ভেট্টোরির বলে ১৮০ রানে আউট তালহা। তবে নবম উইকেটে রাহাতকে নিয়ে শফিক একাই কচুকাটা করেছেন বোলারদের। ১৩৭ রানের ইনিংসে ছক্কা মেরেছেন ছয়টি। তবে শেষ বিচারে শফিকের ইনিংসটা পরাজয়ের ব্যবধানই শুধু কমিয়েছে।
এর আগে তৃতীয় দিনের ৬৩৭-এর সঙ্গে আরও ৫৩ রান যোগ করে অলআউট হয়েছে নিউজিল্যান্ড। ৩৩৯ রানের অগ্রগামিতায় পাকিস্তানের পরাজয়টা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে তখনই।
No comments:
Post a Comment