Saturday, December 6, 2014

যেখানে লর্ডসের চেয়ে এগিয়ে ঢাকার মাঠ

যেখানে লর্ডসের চেয়ে এগিয়ে ঢাকার মাঠ


ক্রিকেটের সূতিকাগার লর্ডস। ক্রিকেটের ‘মক্কা’ হিসেবেও এই মাঠকে অভিহিত করেন অনেকে। কিন্তু লন্ডনের সেন্ট জোনস উডে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক ক্রিকেট ভ্যেনু কিন্তু একটি ব্যাপারে অনেকটাই পিছিয়ে আছে ঢাকার ক্রিকেট মাঠের চেয়ে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজনের দিক দিয়ে লর্ডসের চেয়ে যোজন ব্যবধানে এগিয়ে ঢাকা। ব্যাপারটা অবাক করার মতো হলেও এটাই সত্যি। ক্রিকেট ইতিহাসে লর্ডস যতোগুলি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করেছে ঢাকার দুটি ভ্যেনু-বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও শেরেবাংলা স্টেডিয়াম সম্মিলিতভাবে তারচেয়ে আয়োজন করেছে ৮৫টি বেশি ম্যাচ। আলাদা আলাদাভাবেও ঢাকার এই দুটি ক্রিকেট ভ্যেনু এ​কদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনে পেছনে ফেলেছে লর্ডসকে। লর্ডসে এখনো পর্যন্ত যেখানে আয়োজিত হয়েছে ৫৭টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ, সেখানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম আয়োজন করেছে তারচেয়ে ২টি বেশি— ৫৯টি ম্যাচ। মাত্র ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভ্যেনু হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ​শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম আয়োজনের দিক দিয়ে লর্ডসের চেয়ে এগিয়ে আছে অনেকটাই। গত আট বছরে মোট ৮৩টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান পীঠস্থান এই ভ্যেনুর। ঢাকার দুটি ভ্যেনুতে এখনো পর্যন্ত সম্মিলিতভাবে আয়োজিত হয়েছে মোট ১৪২টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। 
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের জন্ম কিন্তু অনেক আগেই। সেই ১৯৫৫ সালে। একাত্তর-পূর্ববর্তী সময়ে পাকিস্তানের সাতটি টেস্টম্যাচ আয়োজনের অভিজ্ঞতা-সমৃদ্ধ এই মাঠে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ১৬ বছরের মাথায় প্রথম আয়োজিত হয় একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী দিনে এই মাঠে মুখোমুখি হয়েছিল জাভেদ মিয়াঁদাদের পাকিস্তান ও রঞ্জন মাদুগালের শ্রীলঙ্কা। সেবার এশিয়া কাপের মোট পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে (তৎ​কালীন ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়াম)। বাংলাদেশের টেস্ট ও ওয়ানডে মর্যাদা না থাকায়, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এর পরের একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচটি আয়োজিত হতে লেগে যায় পাক্কা দশটি বছর। ১৯৯৮ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচ দিয়ে এই মাঠে আবারও গড়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ততোদিনে বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা না পেলেও হাতে পেয়ে গেছে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলার স্বীকৃতি।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এখন ফুটবলের১৯৯৮ সালের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের পদভারে আবারও ব্যস্ত হয়ে পড়ে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই মাঠ। আটানব্বই সালে এই মাঠেই মাত্র দশ দিনের ব্যবধানে মাঠে নেমেছিল পৃথিবীর সবকটি টেস্ট খেলুড়ে দেশ। এই রেকর্ড আর বিশ্বের আর অন্য কোনো ভ্যেনুর আছে কিনা, সেটা ঘেঁটে দেখতে পারেন পরিসংখ্যানবিদেরা। ২০০৫ সালের ১ মার্চ থেকে এই মাঠ পুরোপুরি চলে গেছে বাংলাদেশের ফুটবলের মালিকানা। তবে ২০১১ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ক্রিকেট-নস্টালজিয়ায়। 
লর্ডস অনেক পুরোনো মাঠ হলেও এখানে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ প্রথম মাঠে গড়িয়েছিল ১৯৭২ সালে। সে বছরের ২৬ আগস্ট ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচটি ছিল লর্ডসের মাঠে আয়োজিত প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। এরপর থেকে ২০১৪ সালের ৩১ মে পর্যন্ত এই মাঠে মোট ৫৭টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে। তবে এই মাঠ গর্ব করতে পারে ওয়ানডে বিশ্বকাপের চারটি ফাইনাল আয়োজন করে। এমন গৌরব নেই পৃথিবীর আর কোনো মাঠেরই।
মূলত ফুটবলের জন্য নির্মিত ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম ক্রিকেটকে দিয়ে দেওয়া হয় ২০০৫ সালে। পুনর্নিমাণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রস্তুতির পর এই মাঠে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট গড়ায় ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর। জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশ ম্যাচ দিয়ে শুরু হওয়া এই ভ্যেনুতে আয়োজিত সর্বশেষ একদিনের ম্যাচটিও বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের। গত ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই মাঠে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে মোট ৮৩টি। ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ এই মাঠকে এনে দেয় অন্যস্তরের মর্যাদা।
বঙ্গবন্ধু ও শেরেবাংলাকে বাদ দিলে বাংলাদেশের আরও তিনটি ভ্যেনু সমৃদ্ধ হয়েছে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম ও বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের পীঠস্থান এখন শেরেবাংলা স্টেডিয়াম১৯৮৮ সালের ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে একদিনের ক্রিকেটের পথচলা। মাত্র ১০টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করেই ২০০৬ সালে এই মাঠ বরণ করে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পরিণতি। চলে যায় ফুটবলের দখলে। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ দিয়ে উদ্বোধন হওয়া একই শহরের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এখনো পর্যন্ত আয়োজিত হয়েছে ১৭টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের অন্যতম ভ্যেনু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম বাংলাদেশের দ্বিতীয়-সেরা ভ্যেনুর মর্যাদা পেয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ২০০৬ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে আয়োজিত হয়েছে ৬টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ২০০৬ সালে ২টি ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর অজ্ঞাত কারণে নিষ্ক্রিয়ই হয়ে আছে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম।

No comments: